কখন শেয়ার বিক্রি করবেন?

এস. এম. হোসেন
মঙ্গলবার , ১০ মে ২০১৬

বহু শেয়ার ব্যবসায়ী আছেন, যারা শেয়ার ক্রয়ের পর সন্তোষজনক লাভ অর্জন করার পরও শেয়ার বিক্রী করেন না। হাতে থাকা শেয়ার ধরে রাখেন। কিন্তু সবসময় কি শেয়ার ধরে রাখা লাভজনক। অনেকসময়ই দেখা যায়, সেই লাভ পরে লোকসানে পরিণত হয়। তাহলে একজন বিনিয়োগকারি কখন শেয়ার বিক্রি করবেন?

২০১০ সালের চরম চাঙ্গা বাজারেও অনেক শেয়ারব্যবসায়ী তার হাতে থাকা শেয়ার ধরে রেখেছিলেন। আরো বেশি লাভের আশায়। বহু দক্ষ ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও শেয়ার বিক্রীর ব্যর্থতা দেখা যায়। তাই শেয়ার বিক্রীয় বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আজকের লেখায় শেয়ার বিক্রয়ের কৌশল মূলত ফান্ডামেন্টাল বিশে­ষণভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে। তবে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অন্য একদিন শেয়ার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষন নিয়ে লিখব।

বস্তুত, বিভিন্ন অবস্থার প্রক্ষাপটে শেয়ার বিক্রী করতে হয়। যার মধ্যে উলে­খ্যযোগ্য

লাভ উঠিয়ে নেওয়া

পোর্টফোলিও সুষমকরণ

প্রথম সুযোগেই ভুল স্বীকার করা ইত্যাদি।

উঠতি বাজারে শেয়ার বিক্রী করে লাভ হাতে নেয়ার বিষয়ে সর্তক থাকুন। এমনকি স্বাভাবিক বাজারেও বাজার সংশোধন, লাভ তুলে নেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে- যে বিষয়ে শেয়ার ব্যবসায়ী, বিশেষভাবে ডে-ট্রেডারদের সর্তক থাকতে হবে। সাধারণভাবে আপনি যদি অপক্ষাকৃত ভালো বিনিয়োগের সুযোগ প্রাপ্ত হন অথবা শেয়ারে বিনিয়োগ করে যদি আপনার উদ্বেগ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে শেয়ার বিক্রী করে দিন। যে সব পরিস্থিতিতে শেয়ার বিক্রী করতে হবে সেগুলোর মধ্যে যুক্তিসঙ্গত কিছু হলো,

ফান্ডামেন্টাল বা চলতি বাজার দরের সার্বিক সূচক মূল্যায়ন ভিত্তিক আপনার প্রত্যাশিত দরের স্তরে পৌঁছার পর সংশি­ষ্ট শেয়ারটি বিক্রী করুন। এই পর্যায়ে সংশি­ষ্ট কোম্পানির, বিশেষভাবে, সকল শেয়ার ধরে রাখা সঙ্গত নয়।

পোর্টফোলিও সুষমকরণের জন্য শেয়ার বিক্রী করুন। সর্বদা আপনার পোর্টফোলিও মূল্যায়ন করুন। কোন বিশেষ শেয়ারে যদি আপনার প্রচুর লাভ অর্জন করার সুযোগ আসে তাহলে সেই শেয়ারের যুক্তিসঙ্গত অংশ বিক্রী করে এবং একই সাথে সম্ভাবনাহীন কোম্পানির শেয়ার যতটা সম্ভব লোকসান মেনে নিয়ে বিক্রী করে দিন। এর ফলে লাভ অর্জন ও একই সাথে লোকসান মেনে নেওয়ার পরেও দেখা যাবে আপনার পোর্টফোলিও সুষম অবস্থায় রয়েছে এবং আপনি বিজয়ীর সারিতে অবস্থান করছেন।

প্রতারক কোম্পানির শেয়ার ধরে রাখবেন না। মন্দ হিসাব প্রতিবেদন, অপরাধ সংঘটনের ঘটনা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে সংশি­ষ্ট শেয়ার থেকে বেরিয়ে আসুন। কখনই প্রতারক ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা রাখবেন না।

অতি সম্ভাবনাময় কোম্পানির ক্ষেত্রেও, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক, প্রতিযোগিতা বা চাহিদার উপর বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে সংশি­ষ্ট কোম্পানির সর্বশেষ ব্যবসায়িক পরিস্থিতি জানার জন্য আর্থিক প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করা হয়। আপনার নির্ধারিত ব্যবসায়িক অগ্রগতির মানদন্ড অর্জনের ক্ষেত্রে যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয় তাহলে উক্ত শেয়ার বেচে দেওয়া সমীচীন। এক্ষেত্রে কোম্পানির সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বা যোগাযোগের বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে না। অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন এক্ষেত্রে মানদন্ড হতে পারে। তবে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করে বিশেষ ক্ষেত্রে অবশ্য বছর খানেক অপেক্ষা করা যেতে পারে। অতঃপর অবশ্যই চূড়ান্ত সিধান্ত নিতে হবে।

সাথে সাথে ভুল স্বীকার করে নিন। শেয়ার বাজারে মোটামুটিভাবে সবাই কোন না কোন সময়ে ভুল করেন। অবশ্য দক্ষ ব্যবসায়ীদের ভুলজনিত ক্ষতির মাত্রা থাকে সহনীয় পর্যায়ে বা নিয়ন্ত্রিত। আপনি যদি অনুধাবন করেন যে বিশেষ কোম্পানির ব্যবসায়িক সম্ভাবনা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আপনি ভুল করেছেন বা বাজারের চাঙ্গা-মন্দাভাবজনিত পরিস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভুল করেছেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভুল স্বীকার করে নিন অর্থাৎ প্রয়োজনে লোকসান স্বীকার করে শেয়ার বেচে দিন। এর ফলে ভবিষ্যতে আপনি বড় ধরনের লোকসান থেকে রেহাই পাবেন।

আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থাও শেয়ার বিক্রী করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্যিক ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ , শিল্পখাতের সার্বিক অগ্রগতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্থাসমূহ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত ইত্যাদিও বিক্রয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

কেবল সোনালী অতীতকে একমাত্র বিবেচ্য বিষয় না ধরে বর্তমান সর্বশেষ পরিস্থিতিও বিবেচনা করুন। অতীত বাজার দরের সবচেয়ে দামী, আকর্ষণীয় কয়েকটি শেয়ারের কথা চিন্তা করুন। বর্তমানে সেই দর কেবলই স্মৃতি। ব্যবসায়িক নীতিতে পরিবর্তন, বাজার অবস্থার পরিবর্তন- এসব কারণে ডুবন্ত সুর্যের সাথে তুলনীয় এ ধরনের শেয়ার বর্তমানে ধরে রাখার কোন যুক্তি নেই। এক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়।

এক্ষেত্রে এডউইন সি ব্লিজ-এর বিখ্যাত উক্তিটি উলে­খ করা যায়।

‘সাফল্যের অর্থ ব্যর্থতার অনুপস্থিতি নয়,

এর অর্থ চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা।

এর অর্থ যুদ্ধে জয়লাভ, প্রতিটি লড়াইয়ে নয়।’