শেয়ারবাজারের প্রধান শক্রু কে বা কারা? যাদের কারণে একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসতে হয়, নি:স্ব হয়ে চরম হতাশা থেকে আত্নহত্যার মতো পথ বেছে নিতে হয়। যা আমরা ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধ্বসের পর দেখলাম।
এই শক্রু আর কেউ নয়, ম্যানিপুলেটররা। হ্যাঁ, তারাই শেয়ারবাজারের এক নম্বর শক্রু। যাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে যায় একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।
তাই বলে কি শক্রুর ভয়ে আপনি শেয়ারব্যবসা করবেন না!
অদক্ষ বা অনভিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য শুধু শেয়ার বাজার নয় বরং জীবনের বহুক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কি প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কেনাবেচা করা থেকে সবাই নিজেকে বিরত রাখবেন? অবশ্যই নয়।
কয়েকদিন আগে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের পাশ দিয়ে হাঁটছি। এক ব্যক্তির হাতে একটি ব্রীফকেস ও একটি হাতঘড়ি। ভদ্র বেশভূষার অন্য একজনের সাথে ঘড়িটির বিক্রয় মূল্য নিয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে আলাপ হচ্ছে। বিক্রেতার কথা ‘স্বর্ণের এই ঘড়িটি এনেছি হংকং থেকে । দাম পড়েছে ২৮০০ টাকা’। পাশের ব্যক্তিটির প্রশ্ন ২৪০০ টাকায় দিবেন। অন্যজনের উত্তর না, এ দামে দেয়া যাবে না। ওদের কথার অতি উচ্চস্বরের জন্য সন্দেহ হলো। পথচারীকে শুনিয়েই কি কথাগুলো বলা হচ্ছে? দুব্যক্তিকে অতিক্রম করে কিছু দূর যেয়ে পিছন ফিরে তাকাই। লক্ষ্য করি তারা দুজনে একত্রে অন্য এক পথচারীকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে। দুজনের ঐ প্রতারক চক্রের একজন ২৪০০ টাকাতে ঘড়িটি কিনতে রাজী হওয়ার অভিনয় করছেন, একথা না বুঝে, কোনো কিছু যাচাই না করেই যদি ঘড়িটি ২৫০০ টাকায় ক্রয় করেন তাহলে আপনি প্রতারিত হবেন। কারণ ঘড়িটির প্রকৃত মূল্য ৬০০ টাকার অধিক নহে।
একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ক্রেতাকে এভাবে প্রতারিত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে উপরোক্ত দুজন প্রতারকের উপস্থিতির কারণে কিন্তু বায়তুল মোকাররম মার্কেট অস্পৃশ্য হয়ে যায়নি। প্রতারকদের কাছে ধরা না দিয়ে অনেকেই ঐ মার্কেট থেকে পছন্দনীয় জিনিস সন্তোষজনক মূল্যে ক্রয় করছেন। অনেকের কাছে কেনাকাটা করার জন্য বায়তুল মোকাররম মার্কেটটি একটি প্রিয় স্থান।
ম্যানিপুলেটররা শেয়ার বাজারের প্রধান শক্রু। এটা নিয়ে দ্বিমত করার কিছু নেই। এদের অস্তিত্ব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারেই রয়েছে। এরা কম দামে শেয়ার ক্রয় করে বিশেষ বিশেষ শেয়ারের মজুদ গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে নিজেদের মাঝে কৃত্রিমভাবে শেয়ার কেনা বেচা করে দর বৃদ্ধি করত মানুষের অজ্ঞতা কিম্বা অদক্ষতার সুযোগ নিয়ে ঐ শেয়ার বেশি দামে বিক্রী করে লাভবান হওয়াই এদের একটি অন্যতম কৌশল। সাধারণ মানুষ এ দর বৃদ্ধিজনিত প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন।
আপনি জানেন ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের সেই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির সময়ে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত স্তরে পৌছে যায়। কিছু মৃত্যুপ্রায় কোম্পানির শেয়ারের দর ঐ সময়ে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। ক্রেতার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, বিশেষভাবে অনভিজ্ঞ/অদক্ষ বেহিসেবী ক্রেতাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে ম্যানিপুলেটরদের পক্ষে ঐ সময়ে বহু শেয়ারের দর বাড়িয়ে বিক্রী করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিলো।
অবশ্য এককভাবে শুধু ম্যানিপুলেটরদের জন্য নয় বরং অপরিপক্ক বাজারে গুজব, ক্রেতাদের সংখ্যাধিক্য বা চাহিদা বৃদ্ধি এবং শেয়ার সরবরাহের স্বল্পতার প্রেক্ষাপটে বেহিসেবী ক্রয়ের জন্যও ঐ সময়ে শেয়ারের দর অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
ম্যানিপুলেটরদের কৌশল কি? কিভাবে তারা বাজারকে ম্যানিপুলেট করে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধ্বসের পর এই যে এত আইনকানুন করা হলো তারপরওতো এখনো মাঝেমাঝেই দেখা যায়, কোন কারণ ছাড়াই তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি শেয়ার ৪০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা হয়ে যাচ্ছে। তারপর ম্যানিপুলেটররা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে সটকে পড়ছে। পথে বসছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আপনাকে ধরতে হবে ম্যানিপুলেটরদের কৌশল। সাধারণত কোন ধরনের শেয়ার নিয়ে ম্যানিপুলেটররা কাজ করে। আর কারাই বা তাদের টার্গেট? যাদের ম্যানিপুলেট করেই শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র।
আগামিকাল পড়ুন: ম্যানিপুলেটরদের টার্গেট কারা?
আপনার মন্তব্য লিখুন