সম্ভাবনাময় শেয়ার কিভাবে চিহ্নিত করবো?

এস. এম. হোসেন
শুক্রবার , ২৫ মার্চ ২০১৬

যেকোন কোম্পানির শেয়ার কিনলেই কি লাভ হয়? যদি তাই হতো তাহলে কি কোন বিনিয়োগকারি লোকসান গুনতো। হা-হুতাশ করতো! সব হারিয়ে আত্নহত্যার মতো পথ বেছে নিত। যেটা আমরা অতি সম্প্রতি ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধ্বসের পর দেখেছি।

তাহলে কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবো? কিভাবে চিহ্নিত করবো সম্ভাবনাময় শেয়ার?

আমি এখন যে কৌশলটির কথা বলব তা বিনিয়োগকারী এবং ডে-ট্রেডার উভয় শ্রেণীর ব্যবসায়ির জন্য প্রযোজ্য। একজন টাইকুন শেয়ার ব্যবসায়ি হতে হলে আপনাকে সম্ভাব্য  স্বল্পতম সময়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আর্থিক ঝুঁকির মাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এমন সব শেয়ার চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে  নিন্মলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা করে একটি প্রাথমিক তালিকা করুন…

প্রাথমিক বাছাই পর্ব

কোন শেয়ারসমূহের দর সচরাচর বেশি হারে হ্রাস বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় না।

কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে হতাশাব্যাঞ্জক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যে অবস্থা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা।

কোন শেয়ারসমূহ দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে লেনদেন হয়।

কোন শেয়ারসমূহের দাম অতিমূল্যায়িত

এক সময়ের ব্লু-চিপ বা জনপ্রিয় শেয়ার অথচ বর্তমানে ঐ সব শেয়ারের কদর নেই বা দরের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে না অথবা সন্তোষজনক লভ্যাংশ ও অন্যান্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই এমন শেয়ার।

কোন শেয়ারসমূহ সাম্প্রতিক সময়েও লাভজনক ছিলো কিন্তু ভবিষ্যতে লাভ অর্জনের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।

বিকল্প বিনিয়োগ সুযোগসমূহের  (যেমন সঞ্চয় স্কীম বা ব্যাংক আমানতের সুদ ইত্যাদি) তুলনায় সন্তোষজনক লভ্যাংশ বা অন্যান্য প্রাপ্তি ঘটবে না এমন শেয়ার।

কোন শেয়ারসমূহের দর সচরাচর বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় যে সময় তখনও আসেনি।

কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার খবর এসেছে।

বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভিন্ন কোনো বিবেচ্য বিষয়।

এবার আপনি উপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে একটি প্রাথমিক তালিকা করুন। এবার দ্বিতীয় বাছাই দিতে হবে।

দ্বিতীয় বাছাই

দ্বিতীয় পর্যায়ের বাছাই পর্বে আপনাকে বিষয়ের আরও গভীরে যেতে হবে। বিশেষ সময়ের বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অতি অল্প সংখ্যক কয়েকটি শেয়ারকে ব্যবসায়ের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র  হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক শেয়ার চিহ্নিত করার সময় কোন শেয়ারসমূহের দর প্রায়ই হ্রাস বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে অথবা সহসা বৃদ্ধি পেতে পারে সে বিষয়টি বিভিন্ন আঙ্গিকে অতি সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।

চিহ্নিত শেয়ারসমূহের দর অতীতে বা সাম্প্রতিক সময়ে কীভাবে, কী পরিমাণে উঠানামা করেছে বা করছে, সব চেয়ে বেশি কেনা বেচা হওয়ার তালিকায় শেয়ারটি মাঝে মধ্যে উঠে আসছে কি না তা পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি কোনো ট্রেন্ড বা টেকনিক্যাল বিশ্লেষকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

প্রিয়, বিনিয়োগকারি আপনাকে সবসময় একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তাহলো নূন্যতম ফান্ডামেন্টাল বিবেচনাতে না নিয়ে ট্রেন্ড বিশ্লেষণের ভিত্তিতে উচ্চমূল্যে কোনো শেয়ার ক্রয় করা ঝুঁকিবহুল।

সহসা দর অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন সীমিত সংখ্যক শেয়ার চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহের আলোকে সিদ্ধান্ত নিন…

সচরাচর বা সাম্প্রতিক সময়ে সে সব কোম্পানির শেয়ারের দর বেশি মাত্রায় উঠানামা করছে এবং বেশি পরিমাণে কেনা বেচা হচ্ছে এমন সব শেয়ার। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ কোন শেয়ারের দর কতদিন পরপর উঠানামা করে সে বিষয়ে ধারণালাভ।

আকর্ষণীয় পিই রেশিও

নতুন তালিকাভূক্ত কয়েকটি কোম্পানি (বিশেষভাবে পণ্যের/ সেবার অধিকতর বিপণন সম্ভাব্যতা সম্পন্ন কোম্পানি)। প্রত্যাশিত দরের অনেক বেশি উচু না নিচু দরে কেনা বেচা শুরু হয়েছে।

স্বল্প সংখ্যক শেয়ারধারী নতুন বা পুরাতন কয়েকটি কোম্পানি যেগুলোর প্রবৃদ্ধি আকর্ষণীয়।

অতি সাম্প্রতিক সময়ে যে সব শেয়ারের দর প্রায়ই হ্রাস বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে তাদের মাঝে ধনাত্মক সম্পর্ক। কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাতীত দর শতকরা ২০- ৩০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

বার্ষিক সাধারণ সভার সময় এগিয়ে আসছে এবং ভালো লভ্যাংশ প্রদানের সম্ভাবনা/ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান সফলতা।

ভালো কোম্পানি, টেকসই আয়, সন্তোষজনক রিজার্ভ, লভ্যাংশ ও অন্যান্য প্রদানের ভালো রেকর্ড, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।

সার্বিক মূল্যসূচক কমতে থাকাকালীন সাধারণত দর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এমন শেয়ার।

ফেস ভ্যালু অপেক্ষা কম বাজার দর সম্পন্ন শেয়ার।

ফেস ভ্যালু অপেক্ষা দাম কম অথচ ব্যবসা সফল শেয়ার।

বিশেষ খাতের শেয়ার (ব্যাংক, বীমা, তথ্য প্রযুক্তি, বস্ত্র, রসায়ন, প্রকৌশল)। যে খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।

নতুন পণ্য, নতুন উৎপাদন শুরু, সম্প্রসারণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন।

উৎপাদনশীলতা অর্জন বা কাঁচামালের দাম কমে যাওয়া।

ভালো ব্যবসা অথচ লভ্যাংশ না দেয়ার প্রভাব।

লভ্যাংশ ঘোষণার প্রভাব।

বার্ষিক সাধারণ সভাতে কোম্পানির আশাতীত ব্যবসায়িক সফলতার খবর প্রচার।

পরবর্তী বছরের জন্য দর বৃদ্ধি শুরুর পর্যায়।

দেশীয়/আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খবর।

সাম্প্রতিক সময়ের ব্ল- চিপ বা জনপ্রিয় শেয়ারসমূহের দরের তুলনামূলক অবস্থান।

সার্বিক বাজার পরিস্থিতি, স্বল্প মেয়াদী/ দীর্ঘমেয়াদের জন্য নিম্নমূখী নাকি উর্দ্ধমূখী।

সর্বশেষ অথচ ট্রেন্ড বিশ্লেষণের  ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো চক্রক্রমিক দর ওঠানামার চক্রের আলোকে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় শেয়ারসমূহের দরের বিশেষ অবস্থান।

বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষাপটে ভিন্ন কোনো বিবেচ্য বিষয়।

উপরের বিষয়সমূহের ভিত্তিতে সম্ভাবনার গুরুত্ব অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিক কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার চিহ্নিত করুন। এরপর বিশেষ সময়ের বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঐসব শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করুন। কারণ শুধু সম্ভাবনাময় শেয়ার চিহ্নিত করলেই হবে না -সঠিক দরে শেয়ার কিনতে না পারলে ভালো মুনাফা করা কঠিন।