শেয়ার ব্যবসা এবং জুয়া খেলার মধ্যে পার্থক্য

এস. এম. হোসেন
মঙ্গলবার , ০৫ জানুয়ারী ২০১৬

কেউ কেউ মনে করেন শেয়ার ব্যবসা এবং জুয়া খেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আসলেই কি তাই?
জুয়ার কোর্টে চাকতি ছুঁড়ে দিয়ে ভাগ্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা আর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে রীতিমতো হিসেব করে কোন কোম্পানীর শেয়ার কেনা-দুটো কি এক জিনিস?

আপনি যদি গুজবে কান দিয়ে ম্যানিপুলেটরদের পাতা ফাঁদে পা দেন সেটা ভিন্ন কথা। তবে শেয়ার ব্যবসা এবং জুয়া খেলা এক জিনিস নয়। মূলত: শেয়ারের দর উত্থান-পতন বিষয়ে, বাজার বিশ্লেষণ করার কৌশল বিষয়ে, এমন কি এসব কৌশলের অস্তিত্ব বিষয়ে সাধারণের মাঝে অসচেতনার ফলে কোথাও কোথাও শেয়ার বাজার জুয়ার কোর্টে পরিণত হয়।

অন্যদিকে ভবিষ্যৎ লাভ ক্ষতির সম্ভাবনা অনুমান করে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন আঙ্গিকে তথ্য সংগ্রহ করে হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি শাস্ত্র, পরিসংখ্যান ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন জ্ঞানের আলোকে ঐ তথ্যাবলি বিভিন্ন ফর্মূলা ও কৌশলে বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক সম্ভাবনার হিসেব করে তারপর একটি কোম্পানির শেয়ার কেনা হয়। একটি শেয়ার কেনা মানে ঐ কোম্পানির মালিক হওয়া। যা আমি এর আগের লেখায় বলেছি।
আর এতো কিছু হিসেব নিকেশের পরেও একটি শেয়ারের সম্ভাবনা দুজনের কাছে দুভাবে ধরা দিতে পারে।

মনে করা যাক, পুষ্পিতা সফটওয়্যার নামক তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির ব্যবসা
সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হলে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে এবং লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণও সে হারে বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ার কারণে একজন বিশেষজ্ঞ এ বিষয়টি বাদ দিয়ে শেয়ারের ভবিষ্যৎ বাজার দর হিসেব করছেন। অন্য একজন ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের বিষয়টি বিবেচনাতে নিয়েই ভবিষ্যৎ দর বিবেচনা করছেন। উভয় ক্ষেত্রেই ফান্ডামেন্টাল বা কোম্পানির মৌলিকত্ব বিবেচনার সাথে ভিন্ন ধরনের স্পেকুলেশন বা জল্পনার ভিক্তিতে শেয়ারের ভবিষ্যৎ দর বিবেচনা করার কারণে দক্ষ দু’জন বিশেষজ্ঞের হিসেবের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু একে জুয়া খেলা বলা যেতে পারে না।

অন্যদিকে একজন সাধারণ অপরিপক্ক ব্যবসায়ী যখন ঐ শেয়ারটিই কেনাবেচা করছেন শুধু ভাগ্যের উপর ভরসা করে তখন সে কেনা বেচা জুয়া খেলার পর্যায়ে পড়ে। মনে করা যাক পূস্পিতা সফটওয়্যার বাজারে আসে ১০০ টাকা মূল্যে। একজন বিজ্ঞ ব্যবসায়ী শেয়ারটি ১৩০ টাকা দরে ক্রয় করে ঐ দর ২৩০ টাকাতে পৌঁছার পর শেয়ারটি বিক্রী করেন। অন্যদিকে একজন অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ী শেয়ারটির দর আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এমন্ ধারণার ভিক্তিতে ২৩০ টাকায় ঐ শেয়ারটি ক্রয় করেন। তিনি ক্রয়ের পর পরই শেয়ারটির দর কমতে তাকে এবং এক পর্যায়ে ঐ দর ১৪০ টাকাতে নেমে আসে। মাসখানেক শেয়ারটির দর ১৪০ টাকার কাছাকাছি অবস্থান করার কারণে দর আর বাড়বে না এই ধারণার ভিত্তিতে তিনি ঐ শেয়ারটি বিক্রী করে দেন। এর কয়েক দিন পর পুনরায় শেয়ারটির দর বাড়তে শুরু করে।

এভাবে বিবেচনাহীন অনুমানের ভিক্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের সর্বোচ্চ মূল্যে শেয়ার ক্রয় করা, দর উঠানামার বিভিন্ন স্তরে শেয়ারটি ধরে রাখা এবং পরবর্তীতে কম দামে বিক্রী করে দেয়া এবং এ ঘটনার পরপরই শেয়ারটির দর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকা- এ সব ঘটনার কোনো ক্ষেত্রেই হিসেব নিকেশ বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণের বিষয় বিবেচিত না হয়ে নিছক ভাগ্যের উপর নির্ভর করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যবসাকে জুয়া খেলার সাথে তুলনা করা চলে।

যারা শেয়ার ব্যবসাকে জুয়া খেলা বা সম্পূর্ণরূপে ভাগ্য নির্ভর মনে করেন এবং কোনো প্রকার হিসেব নিকেশের ধার ধারেন না তারা কখনো জিততে পারেন না। তারা হয়তো কখনো কখনো লাভের মুখ দেখতে পারেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত লোকসানের পাল্লাটাই ভারি হয়।
কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ করে, শেয়ার দরের উত্থান পতনের ছন্দ বা ট্রেন্ড বিবেচনা করে, ঐতিহাসিকভাবে কম দামে শেয়ার ক্রয় করার সাথে জুয়া খেলার সম্পর্ক নেই। এসব বিষয় বিবেচনার বা বৈজ্ঞানিক হিসেব নিকেশের ভিত্তিতেই (জুয়া খেলার ভিত্তিতে নয়) শেয়ারের চূড়ান্ত দর নির্ধারিত হয়। যার প্রমাণ রয়েছে যে কোন দিনের বিভিন্ন শেয়ারের তুলনামূলক দর স্তরের মাঝে। তাই জীবনের মূল্যবান সঞ্চয় নিয়ে কেউ জুয়া খেলতে নামবেন না।

কিভাবে ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ করে, শেয়ার দরের উত্থান পতনের ছন্দ বা ট্রেন্ড বিবেচনা করে, কম দামে শেয়ার কিনে ও সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করবেন-তা পরবর্তী লেখাগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।