শেয়ার ব্যবসায় জয়ী হওয়ার কৌশল

এস. এম. হোসেন
সোমবার , ১১ জানুয়ারী ২০১৬

শেয়ার ব্যবসায় জয়ী হওয়ার আদৌ কোন কৌশল আছে? নাকি কোন হিসেব নিকেশই আমাদের শেয়ারবাজারে কাজে আসে না।

অনেকেই বলেন,‘ম্যানিপুলেটররাই প্রতিটি শেয়ার দরের হ্রাসবৃদ্ধি নির্ধারণ করেন। কখন কোন শেয়ারের দর উঠবে, কোনটির দাম পড়বে, তা ম্যানিপুলেটরদের ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রিত হয়। শেয়ার বাজারে জয়ী হওয়া নিছক ভাগ্যের ব্যাপার। শেয়ার ব্যবসা হলো জুয়া খেলা’- অনেকের বিশ্বাস এসব ধারণাই দুনিয়ার সর্বশেষ এবং একমাত্র সঠিক ধারণা।।

অথচ বাস্তবতা হলো, শেয়ারের দর হ্রাসবৃদ্ধির হিসাব বিষয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ভিত্তিক কৌশলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং এ বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে অনেকে দক্ষ ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। ভাগ্যকে জয় করে সফলতাকে ছিনিয়ে এনেছেন। দক্ষ হিসেবের ভিত্তিতে যে শেয়ারের দর নির্ধারিত হয় তা নিচের কয়েকটি উদাহরণ দেখলেই বোঝা যায়।

যে কোন সময়ের সার্বিক শেয়ার দরের তালিকা লক্ষ করলে জানা যাবে, বিরল ব্যতিক্রম ব্যতীত, সবচেয়ে বেশি দরে যেসব শেয়ার বিক্রী হচ্ছে সেগুলো স্বীয় যোগ্যতা বা অন্তর্নিহিত শক্তির জোরে ঐ সময়ের শেয়ার দরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে; যেমন- রেনেটা, রেকিটবেনকিজার, ব্যাটবিসি, বাটা সু, গ্লাস্কোস্মিথক্লাইন ইত্যাদি।

মাত্র এ বছরের ব্যবধানে রেকিটবেনকিজারের শেয়ারের ১০০৫ টাকা থেকে এখন ১৬০১ টাকায় অবস্থান করছে। অন্তর্নিহিত শক্তির জোর রয়েছে, এমন প্রতিটি শেয়ারই বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও লক্ষণীয় যে, এক সময়ের সর্বোচ্চ দরের স্তরে অবস্থানকারী বহু শেয়ারের তুলনামূলক দর ব্যবসায়িক মন্দার কারণে অনেক নীচে নেমে এসেছে।

অন্যদিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কিছু সংখ্যক শেয়ার বর্তমানে ১০ টাকার কম মূল্যে কেনাবেচা হতে দেখা যায়। এর মূলে রয়েছে ঐ সব কোম্পানির চরম হতাশাব্যঞ্জক ব্যবসায়িক চিত্র।

আবার হতাশ্যাব্যঞ্জক অবস্থান থেকে ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনের ভিত্তিতে উঁচু শেয়ার দরের স্তরে উঠে আসার ঘটনাও রয়েছে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধ্বসের পর অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরও অনেক নীচে নেমে এসেছিল। ধ্বসের পর বাটা সু’র শেয়ার ৪০০ টাকার ঘরে নেমে এসেছিল। আর গতকাল ( ১০ জানুয়ারি) ১৩০৫ থেকে ১৩২৯ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে এর শেয়ার। এছাড়া প্রতি বছরই কয়েক’শ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছে এর বিনিয়োগকারীরা। দক্ষ ব্যবসায়ীরা কিন্তু ঠিকই সে সময় কম দামে ভালো শেয়ার কিনেছেন।

আপনি যদি ঠিকমতো বাজার পর্যালোচনা ও বিশ্বেষণ করেন, তাহলে এসব সম্ভবনাময় শেয়ারের খোঁজ আপনিও পাবেন। রেকিট বেনকাইজার, বাটা, রেনেটা প্রভৃতি শেয়ারের ব্যবসায়িক সফলতা, ঐ ধরনের শেয়ার কম দামে ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া ও দর বৃদ্ধির ধারা বিবেচনা করুন। দক্ষ ব্যবসায়ীগণ কিন্তু এসব সুযোগ হাত ছাড়া করেন না।

মাত্র দুই বছরের কম সময়ের আগে লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের শেয়ার ৩০ টাকার ঘরে ছিল। গত বছর সর্বোচ্চ ১৩৪ টাকা ৯০ পয়সায় উঠেছিল। এখন আবার ৭৫ টাকা ৫০ পয়সায় ( ১০ জানুয়ারির হিসেবে) নেমে এসেছে। কোম্পানিটির আয়ও যে অনেক বেশি তাও নয়। কিন্তু তারপরও শেয়ারটির প্রতি অনেক বিনিয়োগকারীর আগ্রহ রয়েছে।
এর কারণ কি? কারণ, লাফার্জের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাপনা (!)। তবে লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের বর্তমান দর কম না বেশি সে বিষয়ে মন্তব্য করছি না।

আগামিকাল এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।