আমাদের শেয়ারবাজারে ‘স্ট্রাকচারাল প্রবলেম’ আছে : সালমান এফ রহমান

মার্কেটট্রেন্ডবিডিডটকম ডেস্ক
মঙ্গলবার , ২৩ জুন ২০২০

আমাদের শেয়ারবাজারে ‘ স্ট্রাকচারাল প্রবলেম’ আছে।  এটাই আমাদের মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা। সমস্যাটা আমরা আইডেনটিফাই করেছি। কিন্তু সমাধান করতে পারিনি।

করোনার এই সময়ে এশিয়ার শেয়ারবাজার চাঙ্গা থাকলেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের এই অবস্থা কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ কথা বলেন।

সম্প্রতি ডয়চে ভেলে’র বাংলা বিভাগ প্রযোজিত ‘ করোনা বাস্তবতা: সরকারের আগের ভুল সামনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এই বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়্যারমান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল মিন্টু।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে ‘বেসিক স্ট্রাকচারাল ডিফেক্ট’টা হলো এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নাই। ডেইলী ট্রেড করে রিটেইল ইনভেস্টর ( ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী) ৯০ শতাংশ। আর ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এরমধ্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান আইসিবি প্রধান।  অথচ আপনি পাশের দেশ পাকিস্তানের করাচি স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতের বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে যান। লন্ডন, নিউইর্য়ক স্টক এক্সচেঞ্জের কথা বাদই দিলাম। ওখানের তুলনায় আমাদের এখানে একদম উল্টো হচ্ছে। ঐসব দেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৯০ শতাংশ। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ৫ থেকে ১০ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রীর এই বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা না জেনে-বুঝে রিউমারের উপর বিনিয়োগ করে। তারা কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দেখে না, বোঝে না।

আমরা যতদিন এই স্ট্রাকচারাল প্রবলেমটা সলভ্ ( সমাধান) করতে না পারি। আমাদের শেয়ারবাজারের প্রবলেম সমাধান হবে না। তবে, আমাদের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন চেয়ারম্যান, মেম্বাররা জয়েন করেছেন। আশা করি, উনারা এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু অনুকূল পরিবেশ তৈরী করতে হবে। আমাদের বাজারে অনেকগুলো মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে। কিন্তু তারা ’বিলো পার ট্রেড’ করছে। এটা আমাদের বুঝতে হবে, দেখতে হবে, কেন এটা করছে। এখানে প্রবলেম চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়্যারমান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ না করে এটাকে ‘গেট রিচ কুইক’ হিসেবে নেয়। যে এখনই ইনভেস্ট করলাম এখনই তাড়াতাড়ি পাব। তারা বিনিয়োগের আগে সেই কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল দেখে না। দেখে না কোম্পানির ভবিষ্যৎ কি, সম্পদ কতটুকু, দায় কতটুকু, সেল কতটুকু বাড়ল, প্রফিটাবিলিটি দিনদিন বাড়ছে কিনা? এসব না দেখেই তারা ইনভেস্ট করে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার হলো ইক্যুইটি রেজ ( মূলধন উত্তোলন) করার জন্য। আমাদের ব্যাংকগুলো উল্টোপথে চলছে। তারা শর্টটার্ম ডিপোজিট নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে লংটার্ম ইক্যুইটি ফাইন্যান্স করছে।

আরেকটা বিষয়, আমাদের শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর আসাটা কিন্তু এত সহজ না। আমি জানি, কয়েকটা কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, আমাদের যে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন তারা কোম্পানির চেয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রটেকশন বেশী দিচ্ছে।

দেশের বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বলেন, করোনা সংকট থেকে উত্তরণে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে। এটা প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার উপরে। কিন্তু এই টাকাগুলো জনগনের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। এরও একটা প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।

আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেন, যেকোন দেশে বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ লাগে। বিনিয়োগের এক নম্বর জিনিস হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের ‘ডুইং বিজনেস র‌্যাঙ্কিং’ এ দেখেন, আমরা কিন্তু অনেক নীচে। তাই আমরা যে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী চাচ্ছি-সেটাতো শুধু দেশী না বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও আসতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের শেয়ারবাজার খুব দ্রুত ভালো হবে, এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।