সুদ কমালেও পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকরীদের আগ্রহ নেই সরকারের ঘোষিত পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে। সম্প্রতি এ তহবিলের ঋণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে সুদের হার কমানো হয়। এরপরও এতে আগ্রহ বাড়েনি বিনিয়োগকারিদের।
ঋণ বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে এফএএস ক্যাপিটাল লিমিটেড ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এর পর আর কোনো প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য এ তহবিল থেকে ঋণ নেয়নি। এ সময় ঋণ গ্রহণের কোনো আবেদনও আসেনি।
তদারকি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত মে মাসে পুনঃঅর্থায়ন সহায়তা তহবিলের সুদহার শতকরা দেড় পয়েন্ট কমিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সুদহার দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৯ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়ও এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। এছাড়া ঋণগ্রহণের আবেদনের সময়সীমা আরো তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পরিবর্তিত হারে আইসিবির সার্ভিস চার্জ ২ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশে এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের অংশ ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। পরিবর্তিত সুদহার নতুন ঋণের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তবুও কেউ ঋণ নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাইছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বিনিয়াগকৃত মূলধন যেহেতু শূন্য হয়ে গেছে (ইক্যুইটি ঋণাত্মক) তাই মার্জিন ঋণের অর্থ পরিশোধ না করে তারা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সাথে যোগাযোগ করাই বন্ধ করে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার তহবিলটি জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন পদপেক্ষ নিলেও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। মার্জিন ঋণের পুরনো বোঝা ও ঋণাত্মক ইক্যুইটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ঋণ নিতে চাচ্ছেন না। এমনকি দুটি প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহণের আবেদন মঞ্জুর হলেও পরবর্তীতে তারা পিছিয়ে যায়। সহজ মার্জিন ঋণে অনাগ্রহের কারণ হিসেবে তারা জানান, মার্জিন ঋণের সদ্ব্যবহার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া অর্থনীতিতে সার্বিকভাবেই সুদের হার কমে এসেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার-ডিলাররা মূল প্রতিষ্ঠান থেকে কম সুদেই ঋণ পাচ্ছে। এটিও পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আবেদন কমার একটি কারণ।
উল্লেখ্য, সরকার ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বিশেষ স্কিমের ঘোষণা দেয়। সরকারি ঘোষণার প্রায় দুই বছর পর ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়নের প্রথম কিস্তি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা আইসিবিকে দেয়।
কিন্তু ঋণের কঠিন শর্তের কারণে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার-ডিলার প্রতিষ্ঠানগুলো ওই তহবিল থেকে ঋণ নিতে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল না। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণের শর্ত শিথিল করায় ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে সহায়তা তহবিলের অর্থ বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। ২০১৫ সালের জুনে তহবিলের সর্বশেষ কিস্তির ৩০০ কোটি টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তহবিলের প্রায় ৩০ শতাংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। শুরুতে সুদে-আসলে ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলেও পরে তা এক বছর বাড়ানো হয়।
আপনার মন্তব্য লিখুন