ঋণের লাগাম টানা হবে নতুন মুদ্রানীতিতে

মার্কেট ট্রেন্ড বিডিডটকম রিপোর্ট
রবিবার , ২৮ জানুয়ারী ২০১৮

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে আগামীকাল সোমবার। কি থাকছে নতুন মুদ্রানীতিতে?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথাগত ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৮ শতাংশ করা হতে পারে। অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে চাপে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও কিছুটা কমানো হতে পারে। তবে কতটুকু কমবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত নয়। আর এডিআর যতোটা কমানো হতে পারে বলে বাজারে কথা উঠেছে ততোটা কমানো সম্ভব নয়।

এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণের লাগাম টানতে এডিআর কমিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা এ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় জানানো হয়। ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এডিআর সীমা কিছুটা কমানো হতে পারে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের ডিসেম্বরে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এদিকে ঋণ বিতরণের সীমা না কমানো জন্য দাবি জানিয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, নির্বাচনী বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। তাই সীমা কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না।

মুদ্রানীতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের মুদ্রানীতি সংযত ভঙ্গির হলেও ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে ব্যাপকহারে। কোনো কোনো ব্যাংক আইনি সীমালঙ্ঘন করেও ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সর্বশেষ হিসেবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ঋণ বিতরণের আইনি সীমা থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক সে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে। আমানতের সাধারণ ব্যাংক ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হারে ঋণ বিতরণ করায় কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানা করা হয়। আরও কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির চেয়ে ল্যমাত্রা কমাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে সেটিই অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি যাতে আরো একটু উজ্জিবিত হয় সে বিষয়টার দেখা দরকার। এ খাতে ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে সংকোচন করার কথা আসছে। তবে আমার মনে হয় সংকোচনের পরিবর্তে এসব ঋণ যাতে উৎপাদনমুখী খাতে যায় এবং অন্যদিকে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে ঋণ কমানো মোটেও ঠিক হবে না। আর যেসব ঋণ গেছে সেগুলোর ঋণমান দেখা, সেগুলো যথাযোগ্য জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে কিনা এবং আদায় হচ্ছে কিনা। অনেকের ধারণা বেশি ঋণ গেলে মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি শুধু একটি কারনে বাড়ে না। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে বাজারমূল্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট প্রভৃতির উপর। সেক্ষেত্রে মুদ্রানীতি সংকোচন বা বাড়লে এটাতে কোন প্রভাব পড়বে না। এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের বিষয়। উৎপাদন, মানুষের কর্মসংস্থান, আয় বাড়লে মুল্যস্ফীতির বোঝা কমবে। তাই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সংকোচিত না করে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা উচিত। অন্যদিকে সরকার যাতে ব্যাংক থেকে ধার না নেয় সেটিও দেখা দরকার।

সাধারণত, নির্বাচনী বছরে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি ল্যমাত্রা সাড়ে ৫ শতাংশ হলেও ডিসেম্বরে তা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে। আগের মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ ছাড়া অক্টোবরে গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এখন ঋণের লাগাম টানা না হলেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রার বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।