টানা মন্দা পুঁজিবাজারের জন্য সুখবর নেই

মার্কেট ট্রেন্ড বিডিডটকম রিপোর্ট
শুক্রবার , ০৩ জুন ২০১৬

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টানা মন্দা পুঁজিবাজারের জন্য কোন সুখবর নেই। প্রায় ছয় বছর ধরে চলা মন্দাবস্থা কাটাতে এবারের বাজেটের দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল বিনিয়োগকারিরা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ধস-পরবর্তী সংস্কার ও ফটকাবাজির অবসানের কারণে পুঁজিবাজার জেগে উঠবে শুধু এমন আশা প্রকাশ করেছেন। ফলে বাজেটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

রবিবার (২জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্তী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, পুঁজিবাজার দেশের আর্থিক খাতের একটি স্তম্ভ হওয়ার জন্য প্রস্তুত। শেয়ারবাজারের আইনি সংস্কার ও ফটকাবাজির অবসানের কারণে বাজার জেগে উঠবে।

তবে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট প্রণোদনা বা প্রস্তাবনা নেই  । নিজ নিজ খাতে কর-মূসক হ্রাসের সুবিধা পেতে পারে তৈরি পোশাকসহ কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানি। কিন্তু তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে তারা বাজেট থেকে কিছু পাচ্ছে না।

তৈরি পোশাক খাতে করপোরেট করহার ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসার পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ ও সুদ সুবিধার করযোগ্যতা থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। কিন্তু সরাসরি শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাবনা নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুঁজিবাজারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বাজেটে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও বাজারকে এগিয়ে নিতে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। অথচ বাজার অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ও বাজারের চলমান পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় একটি পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট প্রত্যাশা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছিল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ছিল ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ, স্টক এক্সচেঞ্জকে পাঁচ বছরের জন্য সম্পূর্ণ কর অবকাশ সুবিধা প্রদান,  ট্রেকহোল্ডারদের লেনদেনে উস কর দশমিক শূন্য ৫ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ নিয়ে আসা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির লোকসান সমন্বয়ে আট বছর সময় দেয়া, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা, মার্চেন্ট ব্যাংকের বিদ্যমান করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা এবং ব্রোকারেজ হাউজগুলোর করসীমা ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নিয়ে আসা।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এসব দাবির বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা ধরে রাখা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা, সিকিউরিটিজ আইন প্রতিপালন ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পাবলিক ইস্যু বিধিমালা-২০১৫ প্রণীত হয়েছে। এ বাজার থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন,  নিরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে নিরীক্ষকদের প্যানেল গঠন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ৬৩৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।এছাড়া বিএসইসির কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভারতের সেবির সঙ্গে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এডিবির সহায়তায় পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে। ফটকাবাজির অবসান ও নির্মূলের ফলে বাজার জেগে উঠবে।