আজও ডিএসই প্রধান সূচক কমেছে ৮১ পয়েন্ট, দরপতনের শেষ কোথায়?

মার্কেট ট্রেন্ড বিডিডটকম রিপোর্ট
মঙ্গলবার , ১৩ মার্চ ২০১৮

আজ মঙ্গলবারও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৮১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ২৩৩ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রধান কারণ তারল্য সঙ্কট। শুধু শেয়ারবাজার নয় ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সঙ্কটে রয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন নেই বললেই চলে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য নিয়ন্ত্রকসংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। এসব কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও দিন দিন বাজার থেকে সরে যাচ্ছে। যারা ২০১০-এর ধ্বসের পর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল গত কিছুদিনের টানা ধ্বসে তাদের সে স্বপ্ন ধূলিস্বাৎ হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেয়ারবাজারের দর যেভাবে উঠানামা করছে তার আরেক কারণ ব্যাংকের সুদহার স্থিতিশীল না থাকা। কয়েকমাস আগে ব্যাংকের সুদ ছিল ৭ শতাংশ এখন তা ১১ শতাংশ। ব্যাংকের সুদহারের ধারাবাহিকতা না রেখে শেয়ারবাজারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যাওয়ার অর্থ আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজার নিয়ে কারসাজি চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অতীতেও এ কারসাজি চক্রের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিতে পড়েছেন। তারপরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কার্যকরী কোন উদ্যোগ নেয়নি। এখন আবার টানা দরপতন হচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এ দরপতনের শেষ কোথায়?

গতকাল সোমবার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চীনা একটি কনসোর্টিয়ামকে অংশীদার করার বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, শেয়ার বিক্রি নিয়ে অনেকে ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের’ চেষ্টা করছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আজ মঙ্গলবার ডিএসইতে  ২৮২ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে প্রায়  ১৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা কম। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির, কমেছে ২৯১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ার দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৮১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬২৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ২১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে  ২ হাজার ৮৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্টে।

অন্যদিকে আজ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৪১৪ পয়েন্টে। সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২৩০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ১৮৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ার দর।

শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আস্থাহীনতা রয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন একেবারে নেই বললেই চলে। এসব কারণে শেয়ারবাজারের অবস্থা নাজুক।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের দর যেভাবে উঠানামা করছে তার মূল কারণ ব্যাংকের সুদহার স্থিতিশীল না থাকা। কয়েকমাস আগে ব্যাংকের সুদ ছিল ৭ শতাংশ এখন তা ১১ শতাংশ। ব্যাংকের সুদহারের ধারাবাহিকতা না রেখে শেয়ারবাজারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যাওয়ার অর্থ আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।