রবিতে বিলীন হচ্ছে এয়ারটেল

বুধবার , ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মুঠোফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেল এক হতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে আবেদন করেছে। আবেদন অনুযায়ী, রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেল বাংলাদেশ একীভূত (মার্জার) হতে যাচ্ছে। আর একীভূত নতুন কোম্পানির নাম হবে ‘রবি’।

একীভূত হওয়ার এই চিঠিতে সই করেছেন রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুপুন বীরাসিংহে এবং এয়ারটেল বাংলাদেশের এমডি ও সিইও প্রশান্ত দাস শর্মা। দুই অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদন পেলে আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ এক হওয়ার এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।

অপারেটর দুটি এক হলে ৩ কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক নিয়ে এটাই হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটর। বর্তমানে ৫ কোটি ৩৯ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। আর ৩ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক।

আবেদন অনুযায়ী, নতুন গঠিত কোম্পানিতে রবির ৭৫ শতাংশ আর এয়ারটেলের ২৫ শতাংশ মালিকানা থাকবে। রবির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৭০ শতাংশ শেয়ার থাকবে মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের কাছে আর ৫ শতাংশ থাকবে জাপানের এনটিটি ডোকোমোর কাছে।

একীভূত হলে এয়ারটেল বাংলাদেশের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ও দেনার দায়িত্ব নেবে রবি। ভারতী এয়ারটেলের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৪ থেকে মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত এক বছরে এয়ারটেল বাংলাদেশ লোকসান দিয়েছে ৬৭৪ কোটি ৬০ লাখ রুপি বা ৮২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (১ টাকা সমান দশমিক ৮০২ রুপি হিসাবে)। এ সময়ে এয়ারটেল বাংলাদেশের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৬০ কোটি রুপি আর দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৫৫৮ কোটি রুপি।

একইভাবে এয়ারটেলের কাছে থাকা তরঙ্গের মালিকানাও একীভূত হওয়া রবির কাছে চলে যাবে। বর্তমানে এয়ারটেলের কাছে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে আর রবির কাছে আছে ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুটি প্রতিষ্ঠানের তরঙ্গ এক হয়ে ৩৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ হলে তা সব মুঠোফোন অপারেটরের মধ্যে সর্বোচ্চ হবে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের কাছে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ আছে।

অপারেটর দুটি এক হলে নম্বর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ০১৬ কোডটি তিন বছর পর্যন্ত চালু থাকবে। অর্থাৎ একীভূত হওয়ার দিন থেকে তিন বছর পর্যন্ত এয়ারটেলের বর্তমান গ্রাহকেরা ০১৬ কোডযুক্ত বর্তমান নম্বরটিই ব্যবহার করতে পারবেন। নম্বর-সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কোনো অর্থ খরচ হবে না বলেও আবেদনে বলা হয়েছে।

দুই অপারেটরের কাছে বিটিআরসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা-সংক্রান্ত বিষয় সমাধানে রবি দায়িত্ব নেবে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে। দুটি প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো যোগ করে তা গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দিতে সহায়ক হবে বলে মনে করে রবি ও এয়ারটেল।

সবশেষে এক হওয়ার এ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ ও কোম্পানি আইন ১৯৯৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ করেছে রবি ও এয়ারটেল। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র সরওয়ার আলম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, আজকের (বুধবার) কমিশন সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

১৯৯৭ সালে একটেল নামে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে রবি। বাংলাদেশের শিল্পগোষ্ঠী এ কে খান গ্রুপ ও টেলিকম মালয়েশিয়ার যৌথ অংশীদারি কোম্পানি ছিল একটেল। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ ‘রবি’ নামে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে একটেল। রবির পরিশোধিত মূলধনের (পেইড-আপ ক্যাপিটাল) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রবি। গত তিন বছর থেকেই ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করছে রবি।

ভারতী এয়ারটেল ২০১০ সালে ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার ১ লাখ ডলারের বিনিময়ে কিনে নিয়ে এয়ারটেল বাংলাদেশ নামে ব্যবসা শুরু করে। আর ২০১৩ সালে সাড়ে আট কোটি ডলারে কিনে নেয় বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ার।

রবি ও এয়ারটেলের এক হওয়া সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ তানজিব-উল আলমপ্রথম আলোকে বলেন, ‘রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার এ উদ্যোগ প্রমাণ করে বাংলাদেশের বাজার দিন দিন আরও পরিণত হচ্ছে।’

যেভাবে এক হবে

* এক হতে বিটিআরসিতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে রবি-এয়ারটেল

* একীভূত নতুন কোম্পানির নাম ‘রবি’

* রবির ৭৫% আর এয়ারটেলের ২৫% মালিকানা থাকবে

* ০১৬ কোডটি তিন বছর পর্যন্ত চালু থাকবে

*  এয়ারটেলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও দেনার দায়িত্ব নেবে রবি

*  তিন বছর ধরে মুনাফা করছে রবি

*  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এয়ারটেলের লোকসান ৮২২ কোটি টাকা

*  ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে রবি। আর এয়ারটেল ব্যবসা করছে ২০১০ সাল থেকে