আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়ানোর প্রস্তাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ৬ খাতের কোম্পানিতে। খাতগুলো হলো ইস্পাত, সিরামিক, সিমেন্ট, ট্যানারি, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাত।
গত বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল আগামি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানিগুলোর মোবাইল সেবার উপর সম্পূরক শুল্কের পরিমান বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শুল্কের পরিমান বাড়ানোর পাশাপাশি শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায় ব্যয় বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ফার্নেস অয়েল আমদানির ওপর শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইস্পাত খাতের কাঁচামালের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও সিমেন্ট শিল্পে কাস্টমস শুল্কের পরিমান বাড়ানোর পাশাপাশি সিরামিক শিল্পে সম্পূরক শুল্কারোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে এই খাতগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনকারী তিনটি পণ্য ফেরো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন ও ফেরো সিলিকন-ম্যাঙ্গানিজের আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য এর উপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কাস্টমস শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহৃত অ্যাডিটিভস, মর্টারস ও কনক্রিটের।
উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে সিরামিক সিঙ্ক, বেসিন প্রভৃতির উপর।
প্রস্তাবিত বাজেটে ফার্নেস তেল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ফার্নেস অয়েল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার উপর সম্পূরক শুল্কের পরিমান ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে মোবাইলভিত্তিক সেবার ব্যয় বাড়বে। এর ফলে যেমন মোবাইল কোম্পানিগুলোর আয় কমার শঙ্কা রয়েছে তেমনি সাধারণ মানুষের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে শিল্প খাতে ব্যবহৃত লবনের উপর। আগে এই শুল্ক ছিল ৫ শতাংশ। এখন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ করার। এতে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকারী ট্যানারিগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে।
ব্যয় বাড়বে ফার্ণিচার ব্যবসায়ও। ফার্ণিচারের শোরুম পর্যায়ে মূল্য সংযোজন করের ( মূরসক) পরিমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের পুঁজিবাজারে এসব খাতের প্রায় ২৫টি কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে ইস্পাত খাতের বিএসআরএস লিমিটেড, বিএসআরএম স্টীল, আরএসআরএস স্টীল, জিপিএইচ ইস্পাত, এসএস স্টীল ও অ্যাপোলো ইস্পাত।
সিরামিকস খাতের কোম্পানির মধ্যে রয়েছে মুন্নু সিরামিক, আরএকে সিরামিকস, ফু-ওয়াং সিরামিকস, শাইনপুকুর সিরামিকস ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস।
সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আরামিট সিমেন্ট, কনফিডেন্স সিমেন্ট, মেঘনা সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও এমআই সিমেন্ট।
বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডরিন পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার ও সামিট পাওয়ারের ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।
ট্যানারি খাতের কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এপেক্স ট্যানারি। আর টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গ্রামীণফোন।
আপনার মন্তব্য লিখুন