শেয়ারদর নির্ধারণ হবে কিসের ভিত্তিতে?

মার্কেটট্রেন্ডবিডিডটকম রিপোর্ট
রবিবার , ২১ আগস্ট ২০২২

একটি কোম্পানির শেয়ার কেনা উচিত কি দেখে? কোম্পানির আয় সক্ষমতা, লভ্যাংশ নীতি, সেই শেয়ারের উচিত মূল্য, কোম্পানির গ্রোথ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি দেখে। না কি হুজুগে। কারো পরামর্শ শুনে? না কি কোন একটি কোম্পানির দর বাড়ছে, আরো বাড়তে পারে- এ হিসেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শেয়ারবাজার থেকে লাভবান হতে হলে একটি কোম্পানির আয় সক্ষমতা কেমন, কোম্পানিটির গ্রোথ, এর লভ্যাংশ নীতি ইত্যাদি বিবেচনা করেই একজন বিনিয়োগকারীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণাও রয়েছে।

একটি কোম্পানির শেয়ারদর কিসের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়? এ সম্পর্কে বিশ্বে গবেষকদের মধ্যে পথিকৃত হলেন, মার্কিন অর্থনীতিবিদ জন বার উইলিয়ামস। নিজের পিএইচডি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ১৯৩৮ সালে প্রকাশ করেন দ্য থিওরি অব ইনভেস্টমেন্ট ভ্যালু’। এই গবেষণার ভিত্তিতে তিনি প্রস্তাব করেন যে কোম্পানির আয় নয়, বরং লভ্যাংশ নীতিই শেয়ারদর নিয়ন্ত্রণ করে। এ নিয়ে পরবর্তীতে অনেক গবেষকই সহমত পোষণ করেছেন, আবার কেউ কেউ এর বিরুদ্ধ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে অন্যতম মার্কিন অর্থনীতিবিদ মের্টন হাওয়ার্ড মিলার ও ইতালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ফ্র্যাংকো মডিগলিয়ানি। এই দুই অর্থনীতিবিদ ১৯৫৮ সালে যৌথভাবে প্রকাশ করেন ‘মডিগলিয়ানি-মিলার থিওরেম। যা ক্যাপিটাল স্ট্রাকচার ইরেলিবেন্স প্রিন্সিপল হিসেবেও পরিচিত। এই বইয়ে তারা বলেন, একটি কোম্পানির ভ্যালু কত হবে তার সঙ্গে কোম্পানির লভ্যাংশ নীতির কোন সম্পর্ক নেই। তারা বলেন, একটি কোম্পানি কতটা দামি বা এর শেয়ারদর কত হবে তা নির্ভর করে সেই কোম্পানির আয় সক্ষমতার উপর।

আবার অর্থনীতিবিদ জেনসেন ও মেকলিং শেয়ারদর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ জন বার উইলিয়ামসের প্রস্তাবকেই অনেকটা সমর্থন করেছেন। অর্থনীতিবিদ জেনসেন ও মেকলিং ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত তাদের থিওরি অব দ্য ফার্ম: ম্যানেজারিয়াল বিহেভিওর, এজেন্সি কস্টস অ্যান্ড ওনারশিপ স্ট্রাকচার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, বিনিয়োগকারীদের উচ্চ লভ্যাংশ দেয় এমন কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। অবশ্য একইসাথে তারা বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে ভালো লভ্যাংশ দিতে গেলে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন। আর ব্যবস্থাপনা ভালো হলে স্বাভাবিকভাবেই সেই কোম্পানি ভালো পারফর্ম করবে।

তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কোন একটি কোম্পানি হয়তো ভালো মুনাফা করছে। কিন্তু সেই কোম্পানি তার অর্জিত আয় থেকে নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে রিটেইন্ড আনিংস হিসেবে রেখে দিবে। কোম্পানিটির ভবিষ্যত উন্নতির সম্ভাবনায়। এ বিষয়গুলো একজন বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক জেমস ই ওয়াল্টারের মত হলো, এসব কোম্পানির শেয়ার ধরে রাখলে সেখান থেকে ভবিষ্যতে অনেক বেশী রিটার্ণ পাওয়া সম্ভব। কারণ, ভালো প্রবৃদ্ধির কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বন্টন না করে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণে পুনর্বিনিয়োগ করে। এজন্যই দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের কথা বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের আগে একজন বিনিয়োগকারীকে সেই কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর্থিক প্রতিবেদন থেকেই একটি কোম্পানির নিট মুনাফা, প্রবৃদ্ধি, ঋণ ও মূলধনের অনুপাত, লভ্যাংশ প্রদানের রেকর্ড, মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত, সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত, শেয়ার সংখ্যা, অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন ইত্যাদি তথ্য পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোম্পানির আন্তর্নিহিত শক্তিভিত্তিত দর হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা বিষয়েও আগাম ধারণা পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে একজন বিনিয়োগকারীকে জানতে হবে। না জেনেবুঝে কোনভাবেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত না।  

এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে শেয়ার কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভালো কোম্পানির শেয়ার উচিত মূল্যে কিনতে হবে। তাহলে একজন বিনিয়োগকারী মুনাফা করতে পারবেন।