নগদ টাকার সঙ্কটে ইসলামী ব্যাংক, কেমন লভ্যাংশ পাবে বিনিয়োগকারীরা

মার্কেট ট্রেন্ড বিডিডটকম রিপোর্ট
মঙ্গলবার , ২৪ এপ্রিল ২০১৮

নগদ টাকার সংকটের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। গত বছর জানুয়ারিতে ব্যাংকটিতে যে পরিবর্তন শুরু হয় তা এখনো অব্যাহত থাকায় এমন অবস্থায় পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ অবস্থায় আগামিকাল বুধবার বিকাল ৩টায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ সমাপ্ত হিসেব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশ ও বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলেও এবার ব্যাংকটি কেমন লভ্যাংশ দেবে তাই নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা।

কারণ, শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্তির পর থেকে ভাল শেয়ার হিসেবে সবসময় বিনিয়োকারীরা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে আসছেন। কিন্তু গত বছরের পরিবর্তন শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম নিন্মমুখী।

উল্লেখ্য, ইসলামী ব্যাংকের আমানত ও বিনিয়োগ হার ( আইডিআর) বর্তমানে ৯২ শতাংশ হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত হারের চেয়ে ২ শতাংশ বেশী। অন্যদিকে ব্যাংকটি বন্ড ছেড়ে ৫০০ কোটি টাকা তোলার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল তাও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকটির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে নগদ টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছে না।

সর্বশেষ হিসেবে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান মোট আমানতের পরিমান ৭৬ হাজার ৪৯৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে মুদারাবা আমানত ৬৭ হাজার ৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর বাকীটা খরচ ছাড়া (কস্ট ফ্রি) আমানত। ব্যাংকটি বিনিয়োগ রয়েছে ৭৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগ ৭৪ হাজার ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ এবং বাকীটা শেয়ার বিনিয়োগ। সে হিসাবে আইডিআর ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। তবে সার্বিক আর্থিক সূচক ভালো থাকলে  সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা যায়। যদিও সর্বোচ্চ এই হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংকের ঋণ ৮৯ শতাংশের বেশি রয়েছে তাদেরকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এই সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।

এদিকে গত সপ্তাহে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল হাসান।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভাতেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আরাস্তু খান। এরপর ব্যাংকটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা পরিবর্তন আসে। গত সপ্তাহেও ব্যাংকটির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে হয়।

আজ মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ২৫ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। গত এক বছরে এর দর ২৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩৯ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত মুনাফা ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ৯ দশমিক ২৪, যা হালনাগাদ অনিরীক্ষিত মুনাফার ভিত্তিতে ৯ দশমিক ১৪।

১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির ‘ডিসেম্বর’ ক্লোজিং কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬’শ ১০ কোটি টাকা।

কোম্পানিটির রিজার্ভে রয়েছে ৩ হাজার ২৭৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারসংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮টি। এরমধ্যে  পরিচালকদের কাছে ৪৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।