কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন থেকে দেশের ব্যাংক থেকে গৃহঋণ পাবেন। ঋণের অনুপাত হবে ৫০:৫০। এতে কি আবাসন ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁরা যে অর্থ পাঠান, তার ওপরই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়ে আছে। ফলে প্রবাসীরা এ ধরনের একটি সুযোগ পাওয়ার দাবি রাখেন। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তে আবাসন খাতে প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়বে। তবে ঋণের অনুপাত ৩০:৭০ হলে ভালো হতো। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটিকে শুভ সূচনাই বলা যায়।
প্রথম আলো: প্রবাসীরা দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ করতে এলে প্রতারিত হবেন না, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: ব্যাংকঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে প্রবাসীরা প্রতারিত হবেন না। কারণ, ব্যাংক ভবনের নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখেই কেবল অর্থ ছাড় করে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ী ফ্ল্যাট হস্তান্তরের আগে পুরো টাকা বুঝে পাবেন না। আমি মনে করি, ব্যাংকঋণের মাধ্যমে যত বিনিয়োগ আসবে, রিহ্যাব সদস্যদের মধ্যে ততই সুশাসন ফিরে আসবে।
প্রথম আলো: রিহ্যাবের আয়োজনে ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর। এবারে ক্রেতাদের জন্য নতুন কী থাকছে? আপনাদের প্রত্যাশাই বা কী?
আলমগীর শামসুল আলামিন: প্রতিটি মেলায় এক ছাদের নিচে ১৫০-২০০টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকে। ফলে যাচাই-বাছাই করে পছন্দের ফ্ল্যাট কেনার এটা সুবর্ণ সুযোগ ক্রেতাদের জন্য। ফলে মেলা ঘিরে আমরা ব্যবসায়ীরা সব সময়ই আশাবাদী থাকি। বিগত মেলাগুলো থেকে ভালো ফলও পেয়েছি। তবে মেলার পরপরই কোনো না কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মেলার মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা যেটুকু ফিরিয়ে আনি, আবার সেটি নষ্ট হয়ে যায়। যাই হোক, এবারের মেলায়, বিশেষ করে ছোট ফ্ল্যাট নিয়ে আসার চেষ্টা করছে রিহ্যাব সদস্যরা। এ ছাড়া কিছু ব্যাংক থাকবে, যারা ক্রেতাদের ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ দিতে চায়।
প্রথম আলো: আবাসন ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর ধরেই বলছেন ফ্ল্যাটের দাম কম। তারপরও এসব ফ্ল্যাট মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আসলেই কি ফ্ল্যাটের দাম কম?
আলমগীর শামসুল আলামিন: ফ্ল্যাটের দাম কম। তবে এলাকা ও মানভেদে দাম একেক রকম। আবার একই এলাকায় পাশাপাশি দুই প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটের দাম শুধু ফিনিশিংয়ের কারণেও ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই দাম কতটা কমেছে ঢালাওভাবে বলা যায় না। তবে শিগগিরই ফ্ল্যাটের দাম বাড়তে পারে। কারণ, বাজার মন্দা থাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রকল্প নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফলে ফ্ল্যাটের চাহিদা ও জোগান যখন কাছাকাছি চলে আসবে, তখন দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে।
প্রথম আলো: অস্বাভাবিক দামের কারণে ঢাকার ফ্ল্যাট মধ্য আয়ের মানুষ কিনতে পারেন না। কোনো সমাধান আছে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: অবশ্যই আছে। আমি যখন রিহ্যাবের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি, তখন থেকে আমার লক্ষ্য হচ্ছে, মধ্য আয়ের মানুষ যেন ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেন। অবশ্যই এ জন্য ব্যাংক থেকে এক অঙ্কের সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও একটি বিশেষ তহবিল দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। সরকার এটিকে বিশেষ বিবেচনায় রেখেছে। আশা করছি, শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাব।
প্রথম আলো: শুধু কি স্বল্প সুদে ঋণ ও তহবিলের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: ঢাকার অধিকাংশ ফ্ল্যাটের মালিকানা একটি গোষ্ঠীর কাছে চলে যাচ্ছে। তারাই দেশের বড় ইনকাম গ্রুপ। তাদের কাছে প্রচুর নগদ টাকা। যেহেতু ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা পাওয়া যায় না, তাই মধ্যম আয়ের মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারেন না। এ জন্যও স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণ দরকার। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ঢাকা শহরে বর্তমানে জমি পাওয়া খুবই মুশকিল। দামও অনেক। সে জন্য সরকার যদি ঢাকার আশপাশের শহরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করে দেয়, তবে বাকি কাজ রিহ্যাব সদস্যরা করে নেবে। এ জন্য ড্যাপকে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে এটি শিগগিরই বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, এটি না করলে রাস্তাঘাট করার পর আইনি জটিলতায় ভূমির উন্নয়ন ও আবাসন করা যাবে না।
প্রথম আলো: আপনারা সব সময়ই আবাসন খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের কথা বলেন। সরকারও সুযোগ দেয়। বিনিয়োগ কি আসছে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচার হওয়া এই অর্থের বড় অংশ বিদেশে ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনায় ব্যবহৃত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে আমরা যদি সুযোগ তৈরি করে দিই, তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। গত বাজেটে বৈধভাবে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয়কে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রশ্ন করতে পারবে, এমন একটি ধারা আইনে যুক্ত করায় ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। যে কারণে তারা মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় টাকা নিয়ে গিয়ে বাড়ি কিনছে। এই বাধাটি দূর হওয়া খুবই প্রয়োজন।
প্রথম আলো: রিহ্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অনেক অভিযোগ। এটি দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
আলমগীর শামসুল আলামিন: আমাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। এটি আমি অকপটে স্বীকার করি। সারা বছরে আমরা গড়ে ১০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করি। বর্তমানে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে সাড়ে ৫০০। শতাংশ হিসাব করলে এই পরিমাণটা কিন্তু বিপজ্জনক পর্যায়ে নয়। তারপরও এ অবস্থাকে আমরা ছোট করে দেখছি না। সদস্যদের মধ্যে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শুভংকর কর্মকার
অধিকাংশ ফ্ল্যাটের মালিকানা একটি গোষ্ঠীর কাছে যাচ্ছে
শনিবার , ১২ ডিসেম্বর ২০১৫
আপনার মন্তব্য লিখুন